ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে মুনিয়া খান রোজা (২৫) নামে এক ভুয়া গাইনি চিকিৎসককে আটক করেন আনসার সদস্যরা। এরপর তাকে প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সেখান থেকে ওই তরুণীর ঠাই হয় জেলহাজতে। গত শনিবারের এ ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত তরুণী ঢাকা মেডিকেল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিতেন এবং সুযোগ পেলে চিকিৎসকদের রুমে ঢুকে মোবাইলসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি করতেন। এ ছাড়া নীলক্ষেত থেকে অ্যাপ্রোন, আইডি কার্ড এবং মিডফোর্ড থেকে স্টেথোস্কোপ কিনে প্রতারণায় ব্যবহার করতেন এবং নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিতেন।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত মুনিয়া খান রোজা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকের সেলিব্রিটি। তিনি ডাক্তার সেজে ও বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নিয়ে ঢামেকে টিকটক ভিডিও তৈরি করতেন। টিকটকে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবেও পরিচয় দিতেন এই তরুণী।
ঢামেকের নতুন ভবনের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে শনিবার ওই তরুণীকে আটকের পর বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।
চিকিৎসকের মিথ্যা পরিচয় দেওয়া মুনিয়া খান চাঁদপুর সদরের হামান কর্দ্দি গ্রামের প্রয়াত মো. করিম খানের মেয়ে। তিনি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ভাড়া বাসায় থাকেন।
ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান বলেন, শনিবার ভুয়া এক গাইনি চিকিৎসককে নতুন ভবনের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে আনসার সদস্যরা আটক করেন। পরে তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। এই ঘটনায় আমি বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় প্রতারণার মামলা করি। পরদিন রোববার সেই মামলায় তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, ওই ভুয়া নারী চিকিৎসক অ্যাপ্রোন পরে ও গলায় স্টেথোস্কোপ দিয়ে আইসিইউয়ের ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন রুমে যাওয়া-আসা করছিলেন। পরে আনসার সদস্যদের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে ওই নারী বহির্বিভাগের গাইনি চিকিৎসক বলে পরিচয় দিলেও পরে তিনি স্বীকার করেন— তিনি কোনো চিকিৎসক নন।
এদিকে সিসিটিভি ফুটেজে ওই নারীর বিভিন্ন রুমে যাওয়া-আসার দৃশ্য দেখা যায়। হুবহু চিকিৎসকের মতো সেজে ইচ্ছেমতো আইসিইউয়ের ভেতর দিয়ে তিনি ঘুরে বেড়ান।
নিজের শরীরে আগুন দিল কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী
প্রেমিকার অভিযোগে সন্ধ্যায় পরিবারসহ থানায়, রাতে মিলল ঝুলন্ত মরদেহ
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের আনসার প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) উজ্জ্বল বেপারী বলেন, অভিযুক্ত তরুণী আটকের সময় ডাক্তারদের ব্যবহারের অ্যাপ্রোন পরা অবস্থায় ছিলেন। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই— তিনি ডাক্তার নন। একপর্যায়ে তিনি চিকিৎসক নন বলে আমাদের কাছে স্বীকারও করেন।
অপরদিকে অভিযুক্ত মুনিয়া প্রথমে নিজেকে চিকিৎসক দাবি করলেও পরে ভুয়া ডাক্তারের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে আমি কোনো চিকিৎসক নই, চিকিৎসা পেশার সঙ্গে আমি জড়িতও নই। আমি নীলক্ষেত থেকে ৫৫০ টাকা দিয়ে অ্যাপ্রোন কিনি এবং মিটফোর্ড এলাকা থেকে স্টেথোস্কোপ ক্রয় করি। এরপর নীলক্ষেত থেকে একটি আইডি কার্ড বানাই।
অভিযুক্ত মুনিয়ার টিকটক আইডিতে ঢুকে দেখা যায়, তিনি ঢাকা মেডিকেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বসে রোগী দেখছেন এবং চিকিৎসা দিচ্ছেন। এমন আরো অসংখ্য ভিডিও তার প্রোফাইলে রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন সময়ে আপলোড দেওয়া।
অভিযুক্ত তরুণীকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সানাউল হক। তিনি বলেন, শনিবার মধ্যরাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক ভুয়া চিকিৎসককে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় (মামলা নং-৪১) প্রতারণার একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠালে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
পাঠকের মতামত